বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: রবিবার থেকে টানা একমাস উত্তরবঙ্গে থাকবেন রাজ্যপাল। তার মধ্যে প্রথমদিনই শিলিগুড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বলে দিলেন, রাজ্যে আইন–শৃঙ্খলার অবস্থা একেবারেই খারাপ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি থেকে ফেরার পর তাঁর এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। প্রশ্ন তুলেছে প্রকাশ্যে রাজ্যপালের এমন মন্তব্য করার এক্তিয়ার নিয়েও।
রবিবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেন, ‘রাজ্যের অবস্থা জানিয়ে আমি ১৮ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলাম। সেখানে তথ্য দিয়ে বলেছি, বাংলায় এখন চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে। এই অব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না, যেখানে রাজ্য সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হয়ে যায়। আমরা আইনের পথ ভুলে গিয়েছি, বা মূল্যবোধ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গিয়েছি, এমন ধারণা তৈরি হওয়াটা বোধ হয় উল্লখযোগ্য কাজ হবে না।’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কোনও কথায় গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন না বলেও তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়েও এদিন তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, ‘রাজ্যে প্রতিদিন যে সব ঘটনা ঘটছে, তাতে মানবাধিকার যে লঙ্ঘন হচ্ছে, তা একেবার স্বচ্ছ। অথচ সেই বিষয়টি নিয়ে রহস্যময় কারণে রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন চুপ করে রয়েছে।’
তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘এই রাজ্যে আইন–শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। রাজ্যের কিছু প্রধান পুলিশ আধিকারিক ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। তাঁদের কাজ দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের উর্দি খুলে ফেলে রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এটা ঠিক নয়। তাঁরা আগুন নিয়ে খেলছেন। আমাদের ভয়ঙ্কর কোনও রোগ হলে শরীরের যে অবস্থা হয়, রাজ্যের হাল অনেকটা সেই রকম হয়ে গিয়েছে।’ তবে এই কারণে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে কিনা, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যে ফেরার পর ফের এখানকার শাসন ব্যবস্থা ও আইন–শৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনায় তিনি যে ভাবে সরব হয়েছেন, তাতে আগামী কয়েক মাসে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা উথাল–পাথাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
তবে রাজ্যপালের সাংবাদিক সম্মেলনের পরই মুখ খুলেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘রাজ্যপাল কী চাইছেন? এ ভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করার অধিকার তাঁর নেই। এখন যদি তাঁকে তাঁর কাজ মনে করিয়ে দিতে হয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতে পারে না। তাঁর কাজ হল, রাজ্যের বিধানসভা থেকে যে সব বিল তাঁকে পাঠানো হবে, তাতে সই করে দেবেন। মনে হয়, এ সব কথা তাঁর ভেবে দেখা উচিত। তিনি সাংবিধানিক সুরক্ষা পান। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত কোনও পদক্ষেপ করা, বা মানহানির মামলা করার কোনও অধিকার আমাদের নেই।’ এ ভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে রাজ্যপাল এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন বলেও তিনি এদিন অভিযোগ করেন।